প্যারালাইসিস কি?
প্যারালাইসিস হলো শরীরের কোনো অংশের পেশী বা মাসল চালনা করার ক্ষমতা হারানো বা দুর্বল হয়ে যাওয়া অবস্থা। সাধারণত এটি স্নায়ুতন্ত্রের (মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড বা নার্ভ) কোনো ক্ষতি বা ব্যাঘাতের কারণে ঘটে থাকে, যার ফলে ওই অংশের পেশী ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে আক্রান্ত অংশ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে অচল হয়ে যেতে পারে।
প্যারালাইসিস কেন হয়?
প্যারালাইসিস সাধারণত স্নায়ুতন্ত্রের কোনো অংশে আঘাত বা সমস্যা হওয়ার কারণে হয়, যা পেশীর নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায়। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
1. মস্তিষ্কের স্ট্রোক (Stroke): মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের বাধা বা রক্তপাত হলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ পেশী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
2. মস্তিষ্ক বা স্পাইনাল কর্ডে আঘাত: দুর্ঘটনা বা আঘাতের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
3. নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ: যেমন গিলিয়ান-বারে সিনড্রোম, পলিওমায়েলাইটিস, মায়াস্টেনিয়া গ্রাভিস।
4. সংক্রমণ: মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস, নিউরোইনফেকশন।
5. টিউমার: মস্তিষ্ক বা নার্ভে ক্যান্সার বৃদ্ধি।
6. টক্সিন ও বিষক্রিয়া: বিষাক্ত রাসায়নিক, সাপের কামড় ইত্যাদি।
7. নার্ভ কম্প্রেশন: স্নায়ুর উপর চাপে পড়া (যেমন হার্নিয়েটেড ডিস্ক)।
এই কারণে স্নায়ুর সংকেত পেশীতে পৌঁছাতে বাধা পায়, ফলে পেশী দুর্বল বা শিথিল হয়ে পড়ে।
প্রকারভেদ:
কয়েকধরণের প্যারালাইসিস দেখা যায়। তার মধ্যে-
1.স্পাস্টিক প্যারালাইসিস (Spastic Paralysis): স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ক্ষতির কারণে পেশী টানটান ও শক্ত থাকে। পেশী সংকোচন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে চলাচলে অসুবিধা হয়।
2.ফ্ল্যাসিড প্যারালাইসিস (Flaccid Paralysis): পেরিফেরাল নার্ভ বা মাংসপেশীর ক্ষতির কারণে পেশী শিথিল ও দুর্বল হয়। পেশী টোন কমে যায়, ও চলাচলে পুরোপুরি অক্ষমতা থাকতে পারে।
3.সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস (Complete Paralysis): শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশ সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে যায়।
4. আংশিক প্যারালাইসিস (Partial Paralysis): পেশীর কিছুটা শক্তি থাকে, চলাচল আংশিকভাবে সম্ভব হয়।
5.হেমিপ্লেজিয়া(Hemiparalysis): শরীরের এক পাশ (বাম বা ডান) পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়।
6.প্যারাপ্লেজিয়া(Paraplegia): দুই পায়ের প্যারালাইসিস হয়, সাধারণত স্পাইনাল কর্ডের নিচের অংশে সমস্যা হলে।
7.কোয়াড্রিপ্লেজিয়া(Quadriplegia): শরীরের চারটি অঙ্গ (হাত ও পা) প্যারালাইসিস হয়।
কাদের প্যারালাইসিস(পক্ষাঘাত) হওয়ার ঝুঁকি বেশি
প্যারালাইসিস (Paresis/Paralysis) হওয়ার কারণসমূহ
১. Congenital & Perinatal Causes (জন্মগত ও প্রারম্ভিক কারণ)
ব্যাখ্যা: জন্মের সময় বা জন্মের ঠিক আগে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে কোনো সমস্যা থাকলে শিশুর স্নায়ু বা পেশী ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
Cerebral Palsy (সেরিব্রাল পালসি): জন্মের সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে গেলে স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে চলাচল ও পেশীর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা।
Neural Tube Defects (নিউরাল টিউব ত্রুটি): Spina Bifida বা Myelomeningocele-এ মেরুদণ্ড ঠিকভাবে গঠিত হয় না।
Perinatal Hypoxic-Ischemic Injury (জন্মকালে অক্সিজেন-ঘাটতি): মস্তিষ্কে রক্ত বা অক্সিজেন কমে যাওয়া।
Prematurity (প্রিম্যাচিউর বা অল্প gestation জন্ম): CNS এবং পেশী অপরিপক্ক থাকায় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা কম।
২. Infectious & Post-Infectious Causes (সংক্রমণজনিত ও পরসংক্রমণজনিত কারণ)
ব্যাখ্যা: ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ স্নায়ু বা মস্তিষ্কের কোষে ক্ষতি করতে পারে।
Poliomyelitis (পোলিও): স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ু কোষে আক্রমণ, পেশী দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস।
Meningitis / Encephalitis (মেনিনজাইটিস / এনসেফালাইটিস): মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের ঝিল্লিতে প্রদাহ বা সংক্রমণ।
Guillain-Barré Syndrome (GBS) (গিল্যান-বারে সিন্ড্রোম): সংক্রমণের পরে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণে স্নায়ু ক্ষতি।
৩. Traumatic Causes (আঘাতজনিত কারণ)
ব্যাখ্যা: মাথা বা মেরুদণ্ডে আঘাত স্নায়ু বা পেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে।
Head & Spinal Cord Injury (মাথা ও মেরুদণ্ড আঘাত): দুর্ঘটনা, পড়া বা আঘাতজনিত ক্ষতি।
Birth Trauma (জন্মকালীন আঘাত): প্রসবকালে শিশুর স্নায়ু বা মেরুদণ্ডে আঘাত।
৪. Vascular Causes (রক্ত সঞ্চালনজনিত কারণ)
ব্যাখ্যা: মস্তিষ্কে রক্ত বা অক্সিজেন না পৌঁছানো বা ব্লক হওয়া।
Stroke / Cerebrovascular Accident (স্ট্রোক): মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে স্নায়ু কোষ মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত।
Thrombosis / Embolic Events (থ্রম্বোসিস / এম্বোলিজম): রক্তনালীর ব্লকেজ বা থ্রম্বাস।
৫. Neuromuscular & Genetic Disorders (স্নায়ু-পেশী ও জেনেটিক রোগ)
ব্যাখ্যা: জেনেটিক বা পেশী-স্নায়ু রোগ ধীরে ধীরে চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
Muscular Dystrophies (পেশী দুর্বলতা/ডিস্ট্রফি): পেশী ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়।
Peripheral Neuropathies (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি): স্নায়ু ক্ষতি হলে পেশী ও আন্দোলনে সমস্যা।
Metabolic / Neurodegenerative Disorders (মেটাবলিক / নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ): মস্তিষ্ক ও স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৬. Nutritional & Systemic Risk Factors (পুষ্টি ও অন্যান্য ঝুঁকিপ্রধান কারণ)
ব্যাখ্যা: দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টি অভাব বা রোগ স্নায়ু ও পেশী দুর্বলতা বাড়ায়।
Vitamin & Mineral Deficiencies (ভিটামিন ও খনিজ ঘাটতি): বিশেষ করে B12, Vitamin D, আয়রন – স্নায়ু ক্ষতি করতে পারে।
Chronic Illness (দীর্ঘমেয়াদি রোগ): দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ বা অটোইমিউন রোগে প্যারালাইসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
Clinical Summary (সংক্ষেপে):
শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপ্রধান কারণ: জন্মগত CNS সমস্যা, জন্মকালীন অক্সিজেন ঘাটতি, সংক্রমণ বা স্নায়ু/পেশী রোগ।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রধান কারণ: আঘাত, স্ট্রোক, সংক্রমণ এবং নিউরোমাসকুলার রোগ।